শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজারে ১০০ কমলার দাম ২০০ টাকা!

শেখ নাছির উদ্দিন   :=

উপযুক্ত আবহাওয়া ও পরিচর্যার কারণে এ বছর মৌলভীবাজারে কমলার ফলন ভালো হয়েছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে ১ টন। গত বছরের চেয়ে চাষের পরিমাণ বেড়েছে ১৯০ একর।

কিন্তু পোকার আক্রমণে পাকার আগেই তা ঝরে পড়ছে। ফলের আকার বড় হওয়ায় ভালো দাম পেলেও আশানুরূপ লাভ নিয়ে হতাশ চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, নাগপুরী, দার্জিলিং ও খাসি জাতের কমলা চাষ হয়। তারমধ্যে খাসি জাতেরই বেশি চাষ হয়। এ বছর জেলার ৪৪০ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বড়লেখায় ১৫০, জুড়িতে ২৩০ একর এবং কুলাউড়ায় ১২০ একর।

অন্যান্য উপজেলায় বাকি ১০ একর জমিতে চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ২৫০ একর জমিতে। সে তুলনায় এবার বেড়েছে ১৯০ একর। ছোট-বড় ১৪৬টি বাগানে এবার হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৫ টন। যা গত বছর ছিল সাড়ে ৪ টন। সে হিসেবে এবার প্রতি হেক্টরে ১ টন করে উৎপাদন বেড়েছে। জেলায় সব মিলিয়ে ৫ শতাধিক কমলা চাষি রয়েছে।

জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া ও লালছড়ার পাহাড়ি এলাকার কমলা বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছভর্তি ফলন না হলেও কোনো গাছই খালি নেই। বাগানে বাগানে চলছে কমলা সংগ্রহ, বাছাই ও ঝুড়ি ভর্তি করার কাজ।

সেখান থেকে পাইকাররা কিনে ছোট ট্রাকে করে সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি টিলায়ই ছোট-বড় বাগান রয়েছে। বাড়ির মধ্যে ঘরের পাশেও আছে কমলার গাছ।

কমলা চাষি জয়নুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন গাছ থেকে কমলা ঝরে পড়ছে। গান্ধি পোকা কমলার উপর দিয়ে হেঁটে গেলে কমলা ঝরে পড়ে। পোকা কমলার মধ্যে সুঁইয়ের মতো হুল ঢুকিয়ে দেয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার করলেও কাজে আসছে না।

জুড়ির লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি মুর্শেদ মিয়া জানান, তার বাগানে প্রায় ১২শ কমলা গাছ রয়েছে। ফল পাকা শুরু হতেই এক ধরনের পোকা কমলার রস খেয়ে নেয়। এতে পচন ধরে। তাই তারা আধাপাকা কমলা বিক্রি করে দিচ্ছেন। স্থানীয় পাইকারের কাছে ১০০ কমলা ২০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

চাষিরা জানান, একটি গাছে ৫০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত কমলা ধরে। কিন্তু ৪০ শতাংশ কমলা ঝরে পড়ছে। ফলে তারা আগাম বিক্রি করে ফেলছেন। আবার অভাবের তাড়নায় অনেক চাষি অগ্রিম বিক্রি করে দেন।

এরজন্য উপযুক্ত দাম পান না তারা। এজন্য সরকারিভাবে সেচ মেশিন, সার ও পোকা দমনে সহায়তার দাবি জানান তারা। আগে কমলা চাষের একটি প্রকল্প ছিল। ২০০৮ সাল থেকে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পটি চালুর দাবি জানান চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, বর্ষার পরপর গাছের ডাল ছাঁটাই এবং খরার সময় সেচ দেওয়া দরকার। বিশেষ করে পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসে সেচ দিলে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। অন্যদিকে কমলা গাছে কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা দমন সম্ভব।

লেবু জাতীয় ফলে ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করলে এ জাতীয় রোগ দমন করা যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক লুৎফুল বারি জানান, কয়েক বছর ধরে কমলার রোগ ও পোকা-মাকড় দমনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা।

সুষম উৎপাদন পদ্ধতি চাষিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা তা পালন করেছেন; তাদের ফলন ভালো হয়েছে। গাছে যে পরিমাণ কমলা আসে; সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় গাছ তা ধরে রাখতে পারে না।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

মৌলভীবাজারে ১০০ কমলার দাম ২০০ টাকা!

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯
শেখ নাছির উদ্দিন   :=

উপযুক্ত আবহাওয়া ও পরিচর্যার কারণে এ বছর মৌলভীবাজারে কমলার ফলন ভালো হয়েছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে ১ টন। গত বছরের চেয়ে চাষের পরিমাণ বেড়েছে ১৯০ একর।

কিন্তু পোকার আক্রমণে পাকার আগেই তা ঝরে পড়ছে। ফলের আকার বড় হওয়ায় ভালো দাম পেলেও আশানুরূপ লাভ নিয়ে হতাশ চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, নাগপুরী, দার্জিলিং ও খাসি জাতের কমলা চাষ হয়। তারমধ্যে খাসি জাতেরই বেশি চাষ হয়। এ বছর জেলার ৪৪০ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বড়লেখায় ১৫০, জুড়িতে ২৩০ একর এবং কুলাউড়ায় ১২০ একর।

অন্যান্য উপজেলায় বাকি ১০ একর জমিতে চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ২৫০ একর জমিতে। সে তুলনায় এবার বেড়েছে ১৯০ একর। ছোট-বড় ১৪৬টি বাগানে এবার হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৫ টন। যা গত বছর ছিল সাড়ে ৪ টন। সে হিসেবে এবার প্রতি হেক্টরে ১ টন করে উৎপাদন বেড়েছে। জেলায় সব মিলিয়ে ৫ শতাধিক কমলা চাষি রয়েছে।

জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া ও লালছড়ার পাহাড়ি এলাকার কমলা বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছভর্তি ফলন না হলেও কোনো গাছই খালি নেই। বাগানে বাগানে চলছে কমলা সংগ্রহ, বাছাই ও ঝুড়ি ভর্তি করার কাজ।

সেখান থেকে পাইকাররা কিনে ছোট ট্রাকে করে সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি টিলায়ই ছোট-বড় বাগান রয়েছে। বাড়ির মধ্যে ঘরের পাশেও আছে কমলার গাছ।

কমলা চাষি জয়নুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন গাছ থেকে কমলা ঝরে পড়ছে। গান্ধি পোকা কমলার উপর দিয়ে হেঁটে গেলে কমলা ঝরে পড়ে। পোকা কমলার মধ্যে সুঁইয়ের মতো হুল ঢুকিয়ে দেয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার করলেও কাজে আসছে না।

জুড়ির লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি মুর্শেদ মিয়া জানান, তার বাগানে প্রায় ১২শ কমলা গাছ রয়েছে। ফল পাকা শুরু হতেই এক ধরনের পোকা কমলার রস খেয়ে নেয়। এতে পচন ধরে। তাই তারা আধাপাকা কমলা বিক্রি করে দিচ্ছেন। স্থানীয় পাইকারের কাছে ১০০ কমলা ২০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

চাষিরা জানান, একটি গাছে ৫০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত কমলা ধরে। কিন্তু ৪০ শতাংশ কমলা ঝরে পড়ছে। ফলে তারা আগাম বিক্রি করে ফেলছেন। আবার অভাবের তাড়নায় অনেক চাষি অগ্রিম বিক্রি করে দেন।

এরজন্য উপযুক্ত দাম পান না তারা। এজন্য সরকারিভাবে সেচ মেশিন, সার ও পোকা দমনে সহায়তার দাবি জানান তারা। আগে কমলা চাষের একটি প্রকল্প ছিল। ২০০৮ সাল থেকে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পটি চালুর দাবি জানান চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, বর্ষার পরপর গাছের ডাল ছাঁটাই এবং খরার সময় সেচ দেওয়া দরকার। বিশেষ করে পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসে সেচ দিলে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। অন্যদিকে কমলা গাছে কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা দমন সম্ভব।

লেবু জাতীয় ফলে ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করলে এ জাতীয় রোগ দমন করা যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক লুৎফুল বারি জানান, কয়েক বছর ধরে কমলার রোগ ও পোকা-মাকড় দমনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা।

সুষম উৎপাদন পদ্ধতি চাষিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা তা পালন করেছেন; তাদের ফলন ভালো হয়েছে। গাছে যে পরিমাণ কমলা আসে; সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় গাছ তা ধরে রাখতে পারে না।