শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পা হারানো জান্নাতের চমক

মিফতাহুল জান্নাত

পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারায় মিফতাহুল জান্নাত। আর্থিক সংকটের পরিবারে তাকে বাঁচিয়ে তোলাই কঠিন ছিল। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এগিয়ে যায় জান্নাত। সে শুধুই মনোযোগ দেয় লেখাপড়ায়। ফলে তার ভাগ্যে জোটে জিপিএ-৫। এবার এসএসসি পরীক্ষায় এমন ফলাফল করেছে মিফতাহুল জান্নাত।

সে যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়। গত রবিবার এ ফল প্রকাশিত হয়। জান্নাত বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের  মেয়ে। শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের বাসিন্দা।

জানা যায়, জান্নাতের বাবা রফিকুল ইসলাম উপজেলার নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি জমি বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়। চিকিৎসায় রফিকুলের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ব্যয় হয়। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি চলে যায় রফিকুলের। পরে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে ওই বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

রফিকুলের সম্পদ বলতে সাড়ে চার শতক জমি। এই জমির ওপর তিন কক্ষের একটি দালান। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার। মিফতাহুল জান্নাত বড়। ছেলে মুন্তাকিম রাফি (৮) উপজেলার নাভারণ রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

বিদ্যালয়ের বেতন এবং বাড়িতে টিউশনি করে জান্নাতের বাবার মাসে আয় মাত্র ১০ হাজার টাকা। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করান তিনি।

জান্নাত বলেছে, জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি খুব খুশি। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্টই হোক ভালো করে লেখাপড়া করব এবং আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করব। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

জান্নাতের বাবা রফিকুল বলেন, মিফতাহুল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। যত কষ্টই হোক আমি তাকে শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে যাব।

বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুর রহমান বলেন, মিফতাহুল জান্নাত খুব মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুর্ঘটনায় এক পা হারালেও  সে মনোবল হারায়নি। এক পায়ের ওপর ভর করে আস্তে আস্তে বড় হয়েছে সে। চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। জান্নাত অত্যন্ত গরিব পরিবারের মেয়ে। আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে লেখাপড়ায় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

২০১৯ সালের ২০ মার্চ সকালে জান্নাত বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। সে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় ভ্যানটি নাভারণ বাজারের সালেহা সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছালে উল্টো দিক থেকে আসা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন।

পা হারানো জান্নাতের চমক

প্রকাশের সময় : ১০:৩৮:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারায় মিফতাহুল জান্নাত। আর্থিক সংকটের পরিবারে তাকে বাঁচিয়ে তোলাই কঠিন ছিল। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এগিয়ে যায় জান্নাত। সে শুধুই মনোযোগ দেয় লেখাপড়ায়। ফলে তার ভাগ্যে জোটে জিপিএ-৫। এবার এসএসসি পরীক্ষায় এমন ফলাফল করেছে মিফতাহুল জান্নাত।

সে যশোরের শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়। গত রবিবার এ ফল প্রকাশিত হয়। জান্নাত বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের  মেয়ে। শার্শা উপজেলার দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের বাসিন্দা।

জানা যায়, জান্নাতের বাবা রফিকুল ইসলাম উপজেলার নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি জমি বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়। চিকিৎসায় রফিকুলের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ব্যয় হয়। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি চলে যায় রফিকুলের। পরে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে ওই বিদ্যালয়ে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

রফিকুলের সম্পদ বলতে সাড়ে চার শতক জমি। এই জমির ওপর তিন কক্ষের একটি দালান। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার। মিফতাহুল জান্নাত বড়। ছেলে মুন্তাকিম রাফি (৮) উপজেলার নাভারণ রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

বিদ্যালয়ের বেতন এবং বাড়িতে টিউশনি করে জান্নাতের বাবার মাসে আয় মাত্র ১০ হাজার টাকা। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি অনেক কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করান তিনি।

জান্নাত বলেছে, জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি খুব খুশি। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্টই হোক ভালো করে লেখাপড়া করব এবং আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করব। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

জান্নাতের বাবা রফিকুল বলেন, মিফতাহুল প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। যত কষ্টই হোক আমি তাকে শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে যাব।

বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুর রহমান বলেন, মিফতাহুল জান্নাত খুব মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুর্ঘটনায় এক পা হারালেও  সে মনোবল হারায়নি। এক পায়ের ওপর ভর করে আস্তে আস্তে বড় হয়েছে সে। চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। জান্নাত অত্যন্ত গরিব পরিবারের মেয়ে। আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে লেখাপড়ায় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

২০১৯ সালের ২০ মার্চ সকালে জান্নাত বিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। সে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় ভ্যানটি নাভারণ বাজারের সালেহা সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছালে উল্টো দিক থেকে আসা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন।